ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

অদ্রীশ বিশ্বাস

জুলাই ২০১৩
৩/১ ডি, নস্করপাড়া লেন
কলকাতা - ৩১

প্রিয় সমীরদা,
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি চিঠি ( ১৫ জুন ১৯৬৪ তারিখে আইওয়া থেকে ) যা সম্প্রতি 'শহর' পত্রিকার অক্টোবর-নভেম্বর ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে, তার একটি প্রতিলিপি পাঠালাম । চিঠি ছাপা হওয়ার পর মলয়দা একদিন মুম্বাই থেকে ফোন করেছিলেন । আমাদের দীর্ঘক্ষণ কথা হয় । আমি সেই চিঠির মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু হাংরি আন্দোলন ও মলয় রায়চৌধুরী বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত, যা হাংরি এবং মলয়দা বিরোধী দেখতে পাই । অনেকেই দেখেছেন, মলয়দাও দেখেছেন । আমার মনে হয় এগুলো যেহেতু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠির সূত্রে একতরফা ভাবে প্রকাশিত, তাই আপনাদের মতামত ও পিছনের কারণগুলো সামনে আসা দরকার । বিশেষভাবে মলয়দার । যদিও এই ধরণের মতামত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আমরা আগেও পড়েছি হাংরি নিয়ে, মলয়দাকে নিয়ে । অনেক সময়ে গোটা হাংরি আন্দোলনের একমাত্র ধারক হিসাবে সুনীলবাবু বারবার তাই মলয়দাকে টার্গেট করেন । এটা বোঝা যায় যে হাংরির মূল থিংক ট্যাঙ্ক কে, কাকে আক্রমণ করলে কী হবে, অতএব মলয় রায়চৌধুরীকে আক্রমণ করো । হয়তো সুনীলবাবু মলয় রায়চৌধুরীকেই শুধু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলে মনে করতেন আর তাই বারবার তাঁকে আক্রমণের একটা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, যাতে মলয়, হাংরি আন্দোলনের চিন্তার ধারক, তাকে ধ্বসিয়ে দিলে, নস্যাৎ করলে, অন্যরা বাঁচবে না, থাকবে না । এটা হাংরি বিষয়ে আমার অবজারভেশন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আক্রমণ প্রসঙ্গে । কিন্তু আমরা জানি, উনি হাংরি মামলায় পক্ষে মতামত জানিয়েছিলেন । সেটা তাঁর আদর্শবোধ নাকি সাহিত্যিক রাজনীতি, সেটাও আজ নতুন জেনারেশনের জানা দরকার, মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এত আপত্তি কেন, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কী কী কারণে মলয়দাকে এই খেলায় বাদ দিতে চাইতেন তিনি বা দ্বিচারিতা করতেন, অপছন্দ করতেন, নাম কাটতেন, সে-সব এখন পরিষ্কার হওয়া দরকার । তাই যদি সেই চিঠির একটা আলোচনা আপনারা করেন, যা সাহিত্যিক ইতিহাসের প্রকৃত ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করবে । এটা হওয়া জরুরি । আমরা জানি মেইনস্ট্রিম তার মতো করে ইতিহাস রচনা করে এবং সেটাকেই একমাত্র ইতিহাস বলে ; সেটা যে একমাত্র সত্য নয়, সেটা এবার সামনে আসা দরকার । ইতিহাস মুখ তুলে তাকাক ।
                                                                           অদ্রীশ বিশ্বাস

সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা
১৯৬৬
সমীর,
       কয়েকদিন একটু এলোমেলো ছিলুম বলে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি । আমার কবিতার বইটা আগামী সোম-মঙ্গলবার বেরিয়ে যাবে বোধহয় । বেরোলেই তোকে পাঠাবো।
       তোর কবিতাগুলো অত্যন্ত ভালো হয়েছে । এরকম স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ লেখাই কবিতা, আমি আজকাল এরকমই লিখতে চাই, ঠিক পারছি না । তোর এই কবিতাগুলির মধ্যে যে সচেতন র্তনাদ আছে তা খুব গভীরভাবে বুকে লাগে --- এবং তথাকথিত  'কবিত্ব' এবং ছন্দ বাদ দিয়ে তুই যে একেবারে ডাইরেক্ট ভাবে লিখেছিস--- এইটাই বড় সার্থকতা । 
       তুই বারোটা কবিতা নিয়ে যে এক ফর্মার কবিতা ছাপতে চেয়েছিস -- তা অনায়াসেরই বার করা যায় । তুই কোন কবিতাগুলো দিতে চাস --- ঠিক করে দে--- আমি ছাপার দিকটা দেখছিএপ্রিলের শেষেই বেরিয়ে যেতে পারে । তুই যে কবিতাগুলো পাঠিয়েছিলি --- তার মধ্যে যেকটা সম্ভব আমি কৃত্তিবাসে দিয়ে দিচ্ছি, তবে কৃত্তিবাসের কাজ সবে শুরু হয়েছে । বেরুতে কিছু দেরি হবে ।
       তুই যে ঝটিকা কবিতা পাঠের প্ল্যানটা পাঠিয়েছিলি --- সেটা শুনতে খুবই ভালো, কিন্তু কার্যত সম্ভব নয় । আমার কোনোই অসুবিধা ছিল না --- আমি অনায়াসে যেতে পারতুম । কবিতা পড়তে আমার আজকাল খুবই ভালো লাগে । কিন্তু অন্য আর কেই তো এখন যেতে পারবে না । শরৎ বছরে  টানা এক মাস ছাড়া , আর এক দিনও ছুটি পায় না । কোনো সময়েই ও ৭/৮ দিন ছুটি নিতে পারে না, সত্যিকারের অসুখ না হলে --- তখন অফিসের ডাক্তার বাড়িতে আসে । জ্যোতি আমেরিকা চলে গেছে । তারাপদ নতুন সন্তান ও স্ত্রীকে ফেলে বাইরে যেতে পারে না । অর্থাৎ আস্তে আস্তে এখন সকলেই প্রায় কোনো না কোনো বন্ধনে জড়ানো ।
        শক্তির সাপ্তাহিকী ভালোই চলছে । অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এক জার্মান মহিলাকে অকস্মাৎ বিয়ে করেছে । বিনয় রাত্রে কোথায় থাকবে--- এটা প্রত্যেক দিন আলাদা সমস্যা । সন্দীপন কলকাতা শহরেআছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে ।
       তোর কবিতাগুলি সত্যিই খুব ভালো লাগলো। একেবারে স্বাদ বদল । আমি বহুদিন কবিতা লিখতে পারছি না ।
       বেলা আর হনি ভালো আছে নিশ্চয়ই ।
                                                                               সুনীল

( সুনীল এই চিঠিতে আমার কবিতা সম্পর্কে সপ্রশংস উক্তি করলেও, যা তিনি অন্যান্য চিঠিতেও করতেন,  তাঁর সম্পাদিত এই বাংলার এবং দুই বাংলার সংকলনগ্রন্হে আমার কবিতা  অন্তর্ভুক্ত করতেন না ।  বহু কাব্যসংকলন তিনি সম্পাদনা করেছেন ; আমার নামটি সেসময়ে তিনি ভুলে যেতেন !  আমার অনুমান হাংরি আন্দোলনে তাঁকে নেতৃত্বে বসাইনি বলে তিনি  তাঁর ক্ষোভ সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন । )

সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১২

শান্তি লাহিড়ী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আমি-- আমার বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

২০.৬.১৯৭৩
৩৭/২ গড়িয়াহাট রোড
কলকাতা ৭০০ ০১৯
ভাই বেলা ও সমীর,
টেলিগ্রামটা পাবার পর খুব মন কেমন করছে। কিন্তু এক্ষুনি যেতেও পারছি না। সংসার পেতে বসলেই অনেক ঝামেলা। তোমাদের ওখানে হঠাৎ চলে যাওয়ার জন্য আমি আর স্বাতী সব ঠিকঠাক করে ফেলেছিলুম--- এমন সময় স্বাতীর জ্বর হলো। ও সেরে ওঠার পর আবার ছেলের জ্বর। দু'জনেই সেরে ওঠার পর আবার অন্য অসুবিধে। অম্বুবাচীর সময় মা প্রায় এক মাস দমদমে গিয়ে থাকেন--- পরশু চলে গেলেন। আমাদের এ-বাড়িটা এমন যে তালাবন্ধ করে সবাই মিলে চলে যাওয়া যায় না। অন্তত স্বাতী তাই মনে করে। আমি একলাই দ্বারভাঙ্গা যাবো ভেবেছিলাম--- কিন্তু স্বাতী একলা থাকতে পারে না--- ভুতের ভয় পায় ! তাহলেই বুঝে দেখো কি ব্যাপার !
          দ্বারভাঙ্গা যাবার জন্য কিছুদিন ধরেই ছটফট করছি। আগামী মাসে আর একবার উদ্যোগ নেওয়া যাবে--- দেখা যাক কি হয়।
          তোমাদের ওদিককার খবর কি ? গত সপ্তাহে শান্তি লাহিড়ীর বাড়ির কাছে এক জলসায় গিয়েছিলাম। নানারকম সব মজার ব্যাপার হয়েছিল। এখানকার অন্যান্য খবর সব চলছে একরকম। ছোটোদের সবাই ভালো আছে তো ?
                                                           ভালোবাসা জানাই
                                                                  সুনীল

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

৩২/২ যোগীপাড়া রোড
কলকাতা ২৮
১৬.৩.১৯৬৬
সমীর,
        তোর দুটো টেলিগ্রাম পেয়েছি । চিঠি পেলে ব্যস্ততার কথা জানতে পারতুম । 'ভিয়েতনামের' এক ফর্মা ছাপা হচ্ছে দু'এক দিনের মধ্যেই, বাকি এক ফর্মা খুব শিগগির তো সম্ভব নয়। কারণ বেরুতে পারে না। কৃত্তিবাসে তোর অনেকগুলো কবিতা ছাপা হয়ে গেছে--- এখন কৃত্তিবাস বেরুবার আগে--- তোর বই বার করি কি করে । বই বেরিয়ে যাবার পর--- সে বইয়েরই কবিতা কৃত্তিবাসে ছাপা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু--- সুতরাং কৃত্তিবাস বেরুবার কয়েকদিন পর তোর বই বেরুনো উচিত।
        কৃত্তিবাসের কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে --- এবার কৃত্তিবাস ৭ ফর্মার মতন হচ্ছে। কিন্তু কয়েকটি বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করছি --- বেরুতে বেরুতে এ মাসের শেষ--- বা আগামী মাসের প্রথমে--- রবীন্দ্র জন্মদিবসের হৈ-হল্লার সময়ে।
        তোর বই মে-মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ আন্দাজ বেরুতে পারে।
                                                 ভালোবাসা নিস
                                                       সুনীল

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রবাল দাশগুপ্ত

সেন্টার ফর এ এল টি এস
ইউনিভারসিটি অফ হায়দ্রাবাদ
হায়দ্রাবাদ ৫০০ ১৩৪
৩১.৭.১৯৯৩
সমীরবাবু,
        ধরে নিচ্ছি শেষ পর্যন্ত 'অধুনান্তিক এলাকা' পেয়েছেন। ছাপার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেল নিশ্চই। কবে নাগাদ বেরোবে জানতে পারলে ঠিক করতে পারব, আমার যে দু'য়েকজন বন্ধু লেখাটা এখন পড়তে চাইছে তাদের পাণ্ডুলিপির জেরক্স পাঠাবার দরকার আছে কিনা।
        একজন বন্ধু বলছে যে একটি গ্রন্হমালায় 'সাজানো বাগানের পরের স্টপ' আর 'অধুনান্তিক এলাকা' পুনর্মুদ্রণ করতে চায়। আপনারা কি এ-প্রস্তাবে রাজি ? আপনাদের অনুমতি না পেলে স্পষ্টতই আমি কিছু বলতে পারি না। পত্রিকায় মুদ্রিত লেখায় সম্পাদকের আর লেখকের যৌথ স্বত্ত্ব থাকে।
        প্রীতি ও শ্রদ্ধা জানবেন। আশা করি ভাল আছেন।
                                                    ইতি
                                             প্রবাল দাশগুপ্ত

মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়

কেতকী
পো: মণিহারা
পুরুলিয়া
৪.১০.১৯৯৬
শ্রদ্ধেয় সমীরবাবু,
আপনার গুচ্ছ কবিতা শারদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। কেতকী এবার কলকাতা থেকে ছাপা হচ্ছে। এখান থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। কলকাতায় একজন কবিকে যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানেই অফিস খোলা হয়েছে। মাসে ১/২ বার আমাকে যেতে হবে। আর কি?
        কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাও আছে।
        হাওয়া কি বের হয়েছে? আমার কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলাম। দেখবেন চলে কিনা । ছাপা হলে জানাবেন।
        টেলি-কবিতার সংকলন পেলাম কই ? পাঠাবেন। একান্ত অনুরোধ। পাঠাতে ভুলবেন না। চিঠি দেবেন। নতুন কোনো সংবাদ থাকলে জানাবেন।
                                                       নমস্কার
                                           মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়