ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

৩২/২ যোগীপাড়া রোড
কলকাতা ২৮
১৬.৩.১৯৬৬
সমীর,
        তোর দুটো টেলিগ্রাম পেয়েছি । চিঠি পেলে ব্যস্ততার কথা জানতে পারতুম । 'ভিয়েতনামের' এক ফর্মা ছাপা হচ্ছে দু'এক দিনের মধ্যেই, বাকি এক ফর্মা খুব শিগগির তো সম্ভব নয়। কারণ বেরুতে পারে না। কৃত্তিবাসে তোর অনেকগুলো কবিতা ছাপা হয়ে গেছে--- এখন কৃত্তিবাস বেরুবার আগে--- তোর বই বার করি কি করে । বই বেরিয়ে যাবার পর--- সে বইয়েরই কবিতা কৃত্তিবাসে ছাপা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু--- সুতরাং কৃত্তিবাস বেরুবার কয়েকদিন পর তোর বই বেরুনো উচিত।
        কৃত্তিবাসের কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে --- এবার কৃত্তিবাস ৭ ফর্মার মতন হচ্ছে। কিন্তু কয়েকটি বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করছি --- বেরুতে বেরুতে এ মাসের শেষ--- বা আগামী মাসের প্রথমে--- রবীন্দ্র জন্মদিবসের হৈ-হল্লার সময়ে।
        তোর বই মে-মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ আন্দাজ বেরুতে পারে।
                                                 ভালোবাসা নিস
                                                       সুনীল

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রবাল দাশগুপ্ত

সেন্টার ফর এ এল টি এস
ইউনিভারসিটি অফ হায়দ্রাবাদ
হায়দ্রাবাদ ৫০০ ১৩৪
৩১.৭.১৯৯৩
সমীরবাবু,
        ধরে নিচ্ছি শেষ পর্যন্ত 'অধুনান্তিক এলাকা' পেয়েছেন। ছাপার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেল নিশ্চই। কবে নাগাদ বেরোবে জানতে পারলে ঠিক করতে পারব, আমার যে দু'য়েকজন বন্ধু লেখাটা এখন পড়তে চাইছে তাদের পাণ্ডুলিপির জেরক্স পাঠাবার দরকার আছে কিনা।
        একজন বন্ধু বলছে যে একটি গ্রন্হমালায় 'সাজানো বাগানের পরের স্টপ' আর 'অধুনান্তিক এলাকা' পুনর্মুদ্রণ করতে চায়। আপনারা কি এ-প্রস্তাবে রাজি ? আপনাদের অনুমতি না পেলে স্পষ্টতই আমি কিছু বলতে পারি না। পত্রিকায় মুদ্রিত লেখায় সম্পাদকের আর লেখকের যৌথ স্বত্ত্ব থাকে।
        প্রীতি ও শ্রদ্ধা জানবেন। আশা করি ভাল আছেন।
                                                    ইতি
                                             প্রবাল দাশগুপ্ত

মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়

কেতকী
পো: মণিহারা
পুরুলিয়া
৪.১০.১৯৯৬
শ্রদ্ধেয় সমীরবাবু,
আপনার গুচ্ছ কবিতা শারদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। কেতকী এবার কলকাতা থেকে ছাপা হচ্ছে। এখান থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। কলকাতায় একজন কবিকে যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানেই অফিস খোলা হয়েছে। মাসে ১/২ বার আমাকে যেতে হবে। আর কি?
        কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাও আছে।
        হাওয়া কি বের হয়েছে? আমার কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলাম। দেখবেন চলে কিনা । ছাপা হলে জানাবেন।
        টেলি-কবিতার সংকলন পেলাম কই ? পাঠাবেন। একান্ত অনুরোধ। পাঠাতে ভুলবেন না। চিঠি দেবেন। নতুন কোনো সংবাদ থাকলে জানাবেন।
                                                       নমস্কার
                                           মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়
       

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ত্রিদিব মিত্র

শালকিয়া
হাওড়া
৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭
প্রিয় সমীরদা,
আপনার চিঠিপত্র তো একেবারেই বন্ধ। ঠিক নয়। যোগাযোগ রাখবেন। ইন্সপায়ার করবে কে ? 'উন্মার্গ' বার করছি মার্চেই। চিঠি পাওয়া মাত্র কয়েকটি কবিতা পাঠিয়ে দিন। উইদাউট ডিলে। মলয় তো এখন কলকাতায়। তবে আজই সম্ভবত পাটনা যাচ্ছে। সুভাষরা 'ক্ষুধার্ত প্রতিরোধ' বার করছে ফেব্রুয়ারির শেষাশেষি।
        কলকাতার শ্বাস এখন নিথর। চুপচাপ থেকে-থেকে শরীরমনে জং ধরে গেল।
                                                         ত্রিদিব মিত্র

সমীরণ মজুমদার

সমীরণ মজুমদার
সম্পাদক: অমৃতলোক
টি-৪ বিধাননগর
মেদিনীপুর ৭২১ ১০১
৬.৯.১৯৯৫
শ্রদ্ধাভাজনেষু দাদা,
এইমাত্র অফিসে বসে পেলাম। গতকালই কলকাতা থেকে ফিরেছি। আবার কালই লেখাটি নিয়ে ছুটতে হবে প্রেসে। আমাদের পত্রিকার কাজ শেষ পর্যায় চলছে। ফলে পৃ নং দেয়া হয়ে গেছে। তবু চেষ্টা করছি লেখাটি যতখানি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞ । অনেক বিরক্ত করেছি। ক্ষমাপ্রার্থী।
                                                            শ্রদ্ধাসহ
                                               সমীরণ মজুমদার

সমীরণ মজুমদার

মেদিনীপুর
২১.৮.১৯৯৫
শ্রদ্ধাভাজনেষু
দাদা
শক্তি চট্টোপাধ্যায়-এর উপর আপনার প্রতিশ্রুত প্রবন্ধটি এখনও পেলাম না। কাজ আটকে রয়েছে। দ্রুত পাঠাবান আমাদের পত্রিকার জন্য এই আশায় রয়েছি। এর আগেও বারকয়েক তাগাদা দিয়েছি। হয়তো এজন্য ক্ষুণ্ণ হয়েছেন কিনা জানি না। তবুও অনুরোধ, লেখাটা পাঠান।
                                                    শ্রদ্ধাসহ
                                             সমীরণ মজুমদার

কমল চক্রবর্তী

জামশেদপুর
২৫/৮/১৯৯৫
প্রিয় সমীরদা
১) মাছের ফাইল, ২) চাপাখানা। অফসেট, খবরের কাগজের মাপের। বাইকালার। ফাইল। একটা খবরের কাগজ তৈরি হয়ে যাবে। এবং প্রকাশনী। এই দুটো কাজ।
৩) মলয়দা কি ৪ [চার কোটি] টাকা লোনের ব্যবস্হা করতে পারবেন ? কত লোন পারেন?
           আপাতত আপনি এলে আপনাকে একদিন জায়গা দেখাতে নিয়ে যাবো। ৩৬ বিঘে, হয়ে গেছে। আরও ১০০ বিঘে কিনব। টাকা চাই। সদস্যর তালিকায় আপনার নামও আছে। আপনি ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রথমে কাজের টাকা নিজেদের সংগ্রহ করতে হবে। প্রাথমিক লাগবে ১০; তারপরে আর পেচনে ফিরে তাকানো নেই।
          আপনি ভেবে-চিন্তে জবাব দিন। এই একবার শেষবার স্বাধীনতার পর গোটা বাঙ্গালি ও ভারতীয় এবং বিশ্বকে নাড়া দেবার সুযোগ। এটা আমরা সহজে নষ্ট হতে দেব না। কারণ এদেশের ভবিতব্য ট্রেনে চাপা পড়ে মারা-যাওয়া।
          কাজ করার সুযোগ এসে গেছে। আপনি এক দিনের জন্য চলে আসুন। যে কোনো দিন। বেলাদি ও আপনি শ্রদ্ধা নেবেন।
                                                         অনুগত
                                                          কমল

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 কৃত্তিবাস
১১ অক্রুর দত্ত লেন
কলকাতা ৭০০ ০১২
সমীর
          রেণুজীর মৃত্যুসংবাদ হঠাৎ বুকে এসে ধাক্কা মারলো। কৃত্তিবাসের একটি সংখ্যা আজই বেরুচ্ছে। পরবর্তী সংখ্যায় রেণুজী সম্পর্কে তোকেই লিখতে হবে। অবিলম্বে কিছু লিখে পাঠাবি। সাত-আট দিনের মধ্যে।
        আবার কবে কলকাতা আসছিস ?
                                                      সুনীল
                                                             ১৩-৪-৭৭

বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

২৫/১/১৯৬৬
সমীর
        ডেরি-অন-সোনে আমার চোখের সামনে দিয়ে বম্বে মেল বেরিয়ে যায়। তখন আমাদের ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছোঁয়নি। পরবর্তী ট্রেন পাঠানকোট ভোর সাড়ে চারটের সময়। বসে বসে শীতে কাঁপবার বদলে একদল লোকের সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দিলুম। একজন রেলকর্মীর নামে স্টেশন মাস্টারের কাছে কমপ্লেন ইত্যাদি করতে-করতেই বেশ সময় কেটে গেল।
        পাঠানকোট সারা রাস্তা লেট করতে লাগলো। একবার তো একটা বগি ছিঁড়ে বেরিয়েই গেল, পেছনের দিকে অবশ্য--- তাই নিয়ে হৈ চৈ মেরামত হলো--- আমার ট্রেন চলা--- অনবরত সাসপেন্স--- কখন ট্রেনটা কলকাতায় পৌঁছোবে। কারণ, আমি আগাগোড়াই ভাবছি--- সেদিন সন্ধের মধ্যে না পৌঁছুতে পারলে--- আমার আসাটাই ব্যর্থ; তাহলে তো আরো কয়েকদিন থেকে এলেই পারতুম। বর্ধমান এলো--- বিকেল পাঁচটায়--- আমি তখনও ছটফট করছি, ট্রেন তখনও থেমে থেমে চলছে, সাড়ে সাতটা আন্দাজ শিয়ালদা থেকে এক মাইল দূরে সিগনাল না পেয়ে ট্রেন নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তখন সুটকেস হাতে ঝুপ করে লাফিয়ে পড়ে অন্ধকার রেল লাইন ধরে ধরে ছুটে, বাঁধ দিয়ে গড়িয়ে নেমে-- নারিকেলডাঙা রোডে এসে উপস্হিত। সেখান থেকে ট্যাক্সি ধরে সোজা আনন্দবাজার। সে এক অ্যাডভেঞ্চার। ততক্ষণে আমাকে বিষম খোঁজাখুঁজি পড়ে গেছে।
        এসবে কিন্তু মাথার একটুও ক্ষতি হয়নি। কারণ মন-মেজাজ বেশ প্রখর হয়েছিল। ক্রমশ দেখছি শান্ত জীবনের প্রতি আমার দুর্নিবার লোভ দেখা দিচ্ছে। বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আমি কোনোদিন সুবিধে করতে পারিনি। কিন্তু হনির সঙ্গে খেলা করতে আমার এমন ভালো লেগে গেল। আগে ছিল, সৌন্দর্য বা প্রকৃতি দেখলেই--- তাকে ধ্বংস করার প্রবল ইচ্ছে। এখন ভালো লাগছে, শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকতে। বেতলার ডাকবাংলোয় যে গিয়েছিলাম--- দু'এক বছর আগে হলে কি ব্র্যান্ডির বোতল নিতে কোনক্রমে ভুলে যেতুম বা শেষ পর্যন্ত মহুয়া জোগাড় না করে ছাড়তুম ?  আরও কত কত গন্ডোগোলের সন্ধান করতুম কে জানে। এখন দেখছি, কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকার মধ্যেও একটা প্রবল উত্তেজনা আছে। নিজেকে পোষ মানানোও এক রকমের নেশা। এখন বেশ ভালো লাগছে কয়েকটা দিন। ঠিক করেছি, কলকাতার দলবলের সঙ্গে নয়, একা একা প্রায়ই দুচারদিনের জন্য কলকাতার বাইরে ঘুরে আসবো। তুই ওখানে অফিসের কাজকর্ম গুছিয়ে নিয়ে কিছুটা হাল্কা হলে--- পরে আবার একবার যাবো। বেলা খুব ভালো মেয়ে--- বিয়ে করে সন্দীপনের মতো ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা তোর একটুও নেই। কলকাতার বিবাহিত বন্ধুদের দেখলে--- আমার বিয়ে করার শখ একেবারে উপে যায়।
        কলকাতার গুরুতর খবর--- বিনয় মজুমদার এখন জেলে। কয়েকদিন আগে বিনয়ের পাগলামি একটু বেড়ে যায়। যে হোটেলে থাকতো--- সেই হোটেলের ঠাকুরকে ঘুমন্ত অবস্হায় লাঠি মেরে খুন করতে যায়। প্রথমে আমি শুনেছিলাম--- লোকটা খুনই হয়ে গেছে। এখন জানলুম, না, আঘাত খুব মারাত্মক নয়, বেঁচে উঠবে লোকটা। ফেব্রূয়ারিতে বিনয়ের কেস উঠবে--- এখন বিনয়ের জন্য কেউ জামিন হয়ে ছাড়াতে রাজি নয়। কারণ ছাড়িয়ে কোথায় রাখা হবে ? বিনয়ের দাদা ওর ভার নিতে অস্বীকার করেছেন। হাজতে বিনয়কে কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখে খুব অদ্ভুত লাগলো। স্বাভাবিক হয়ে গেছে এখন। কৃত্তিবাসে একটা কবিতা ছাপার বিষয়ে কথা বললো। বিনয়ের তুলনায় আমরা কতো ছোটো। পৃথিবীতে দু'একজন মাত্রই থাকে -- যারা কবিতা ছাড়া আর সব কিছুই ভুলে যায়-- আর সব কিছুই তাদের কাছে অকিঞ্চিৎকর। কৃত্তিবাসের জন্য তোর লেখা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিস।
                                                        সুনীল
( বেলা সমীর রায় চৌধুরীর স্ত্রী। হনি ওনার মেয়ে। সমীর এই সময়টিতে কৃত্তিবাস পত্রিকায় আর কবিতা দিচ্ছিলেন না; প্রধানত হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সুনীল ও কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের কার্যকলাপের জন্য । সমীরের গোচরে একথা এসেছিল যে আয়ওয়া থাকাকালে সেখান থেকে সুনীল তাঁর পরিচিত সবাইকে হাংরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে ওসকাচ্ছিলেন । সন্দীপন, উৎপল, শক্তি, শরৎ প্রমুখকে লেখা চিঠিগুলি থেকে তার প্রমাণ মেলে ।
 নিম্ন আদালতে সমীরের ছোটো ভাই মলয়ের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিল । সমীরের ক্রোধ প্রশমিত করতে সুনীল গিয়েছিলেন ডালটনগঞ্জে । সমীর তাঁকে অফিসের জিপে চাপিয়ে একজন পিয়নের সঙ্গে ডেহরি অন সোন স্টেশানে ট্রেনে তুলে দেবার জন্য পাঠিয়েছিলেন । সুনীল এখানে সে কথাটি উহ্য রাখলেন ।  ধন্যবাদ জানাবার প্রয়োজন মনে করলেন না ।)