কলকাতা
১৯৬৬
সমীর,
কয়েকদিন একটু এলোমেলো ছিলুম বলে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি । আমার কবিতার বইটা আগামী সোম-মঙ্গলবার বেরিয়ে যাবে বোধহয় । বেরোলেই তোকে পাঠাবো।
তোর কবিতাগুলো অত্যন্ত ভালো হয়েছে । এরকম স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ লেখাই কবিতা, আমি আজকাল এরকমই লিখতে চাই, ঠিক পারছি না । তোর এই কবিতাগুলির মধ্যে যে সচেতন আর্তনাদ আছে তা খুব গভীরভাবে বুকে লাগে --- এবং তথাকথিত 'কবিত্ব' এবং ছন্দ বাদ দিয়ে তুই যে একেবারে ডাইরেক্ট ভাবে লিখেছিস--- এইটাই বড় সার্থকতা ।
তুই বারোটা কবিতা নিয়ে যে এক ফর্মার কবিতা ছাপতে চেয়েছিস -- তা অনায়াসেরই বার করা যায় । তুই কোন কবিতাগুলো দিতে চাস --- ঠিক করে দে--- আমি ছাপার দিকটা দেখছি । এপ্রিলের শেষেই বেরিয়ে যেতে পারে । তুই যে কবিতাগুলো পাঠিয়েছিলি --- তার মধ্যে যেকটা সম্ভব আমি কৃত্তিবাসে দিয়ে দিচ্ছি, তবে কৃত্তিবাসের কাজ সবে শুরু হয়েছে । বেরুতে কিছু দেরি হবে ।
তুই যে ঝটিকা কবিতা পাঠের প্ল্যানটা পাঠিয়েছিলি --- সেটা শুনতে খুবই ভালো, কিন্তু কার্যত সম্ভব নয় । আমার কোনোই অসুবিধা ছিল না --- আমি অনায়াসে যেতে পারতুম । কবিতা পড়তে আমার আজকাল খুবই ভালো লাগে । কিন্তু অন্য আর কেউই তো এখন যেতে পারবে না । শরৎ বছরে টানা এক মাস ছাড়া , আর এক দিনও ছুটি পায় না । কোনো সময়েই ও ৭/৮ দিন ছুটি নিতে পারে না, সত্যিকারের অসুখ না হলে --- তখন অফিসের ডাক্তার বাড়িতে আসে । জ্যোতি আমেরিকা চলে গেছে । তারাপদ নতুন সন্তান ও স্ত্রীকে ফেলে বাইরে যেতে পারে না । অর্থাৎ আস্তে আস্তে এখন সকলেই প্রায় কোনো না কোনো বন্ধনে জড়ানো ।
শক্তির সাপ্তাহিকী ভালোই চলছে । অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এক জার্মান মহিলাকে অকস্মাৎ বিয়ে করেছে । বিনয় রাত্রে কোথায় থাকবে--- এটা প্রত্যেক দিন আলাদা সমস্যা । সন্দীপন কলকাতা শহরেই আছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে ।
তোর কবিতাগুলি সত্যিই খুব ভালো লাগলো। একেবারে স্বাদ বদল । আমি বহুদিন কবিতা লিখতে পারছি না ।
বেলা আর হনি ভালো আছে নিশ্চয়ই ।
সুনীল
( সুনীল এই চিঠিতে আমার কবিতা সম্পর্কে সপ্রশংস উক্তি করলেও, যা তিনি অন্যান্য চিঠিতেও করতেন, তাঁর সম্পাদিত এই বাংলার এবং দুই বাংলার সংকলনগ্রন্হে আমার কবিতা অন্তর্ভুক্ত করতেন না । বহু কাব্যসংকলন তিনি সম্পাদনা করেছেন ; আমার নামটি সেসময়ে তিনি ভুলে যেতেন ! আমার অনুমান হাংরি আন্দোলনে তাঁকে নেতৃত্বে বসাইনি বলে তিনি তাঁর ক্ষোভ সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন । )
১৯৬৬
সমীর,
কয়েকদিন একটু এলোমেলো ছিলুম বলে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি । আমার কবিতার বইটা আগামী সোম-মঙ্গলবার বেরিয়ে যাবে বোধহয় । বেরোলেই তোকে পাঠাবো।
তোর কবিতাগুলো অত্যন্ত ভালো হয়েছে । এরকম স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ লেখাই কবিতা, আমি আজকাল এরকমই লিখতে চাই, ঠিক পারছি না । তোর এই কবিতাগুলির মধ্যে যে সচেতন আর্তনাদ আছে তা খুব গভীরভাবে বুকে লাগে --- এবং তথাকথিত 'কবিত্ব' এবং ছন্দ বাদ দিয়ে তুই যে একেবারে ডাইরেক্ট ভাবে লিখেছিস--- এইটাই বড় সার্থকতা ।
তুই বারোটা কবিতা নিয়ে যে এক ফর্মার কবিতা ছাপতে চেয়েছিস -- তা অনায়াসেরই বার করা যায় । তুই কোন কবিতাগুলো দিতে চাস --- ঠিক করে দে--- আমি ছাপার দিকটা দেখছি । এপ্রিলের শেষেই বেরিয়ে যেতে পারে । তুই যে কবিতাগুলো পাঠিয়েছিলি --- তার মধ্যে যেকটা সম্ভব আমি কৃত্তিবাসে দিয়ে দিচ্ছি, তবে কৃত্তিবাসের কাজ সবে শুরু হয়েছে । বেরুতে কিছু দেরি হবে ।
তুই যে ঝটিকা কবিতা পাঠের প্ল্যানটা পাঠিয়েছিলি --- সেটা শুনতে খুবই ভালো, কিন্তু কার্যত সম্ভব নয় । আমার কোনোই অসুবিধা ছিল না --- আমি অনায়াসে যেতে পারতুম । কবিতা পড়তে আমার আজকাল খুবই ভালো লাগে । কিন্তু অন্য আর কেউই তো এখন যেতে পারবে না । শরৎ বছরে টানা এক মাস ছাড়া , আর এক দিনও ছুটি পায় না । কোনো সময়েই ও ৭/৮ দিন ছুটি নিতে পারে না, সত্যিকারের অসুখ না হলে --- তখন অফিসের ডাক্তার বাড়িতে আসে । জ্যোতি আমেরিকা চলে গেছে । তারাপদ নতুন সন্তান ও স্ত্রীকে ফেলে বাইরে যেতে পারে না । অর্থাৎ আস্তে আস্তে এখন সকলেই প্রায় কোনো না কোনো বন্ধনে জড়ানো ।
শক্তির সাপ্তাহিকী ভালোই চলছে । অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এক জার্মান মহিলাকে অকস্মাৎ বিয়ে করেছে । বিনয় রাত্রে কোথায় থাকবে--- এটা প্রত্যেক দিন আলাদা সমস্যা । সন্দীপন কলকাতা শহরেই আছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে ।
তোর কবিতাগুলি সত্যিই খুব ভালো লাগলো। একেবারে স্বাদ বদল । আমি বহুদিন কবিতা লিখতে পারছি না ।
বেলা আর হনি ভালো আছে নিশ্চয়ই ।
সুনীল
( সুনীল এই চিঠিতে আমার কবিতা সম্পর্কে সপ্রশংস উক্তি করলেও, যা তিনি অন্যান্য চিঠিতেও করতেন, তাঁর সম্পাদিত এই বাংলার এবং দুই বাংলার সংকলনগ্রন্হে আমার কবিতা অন্তর্ভুক্ত করতেন না । বহু কাব্যসংকলন তিনি সম্পাদনা করেছেন ; আমার নামটি সেসময়ে তিনি ভুলে যেতেন ! আমার অনুমান হাংরি আন্দোলনে তাঁকে নেতৃত্বে বসাইনি বলে তিনি তাঁর ক্ষোভ সারাজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন । )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন