ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

ষাটের দশকে চাইবাসার চালাঘরের উঠানে সমীর রায়চৌধুরী

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১২

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

চিঠিতে ঠিকানা ও তারিখ নেই
ডাক ঘরের ছাপ থেকেও বোঝা যাচ্ছে না
সমীর,
        এই মাত্র তোর টেলিগ্রাম পেলুমকী যে সাহেব হয়েছিস । টেলিগ্রামের বদলে চিঠি লিখলে বেলার খবরও জানতে পারতুম; বেলা এবং তোদের নতুন সন্তান কেমন আছে ?
        স্বাতী নার্সিং হোম থেকে ওদের বাড়িতে ফিরে গেছে, ভালো আছে--- ক্রমশ ভালো হয়ে উঠছে। এখন ছেলের নাম নিয়ে জল্পনা চলছে, আমি তার থেকে অনেক দূরে আছি --- নাম নিয়ে আমার একদম ভাবতে ইচ্ছে করে না। নতুন পিতৃত্বের ফলে আমার মধ্যে হঠাৎ খুব অস্বস্তি জেগেছে, খালি মনে হচ্ছে কোথাও বাইরে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসি --- কোথাও গিয়ে দারুণ গন্ডোগোল করি, অনেক কিছু ভেঙে চুরমার করি, অন্তত বিপুল মদ্যপান করে বেশ কয়েকদিন অজ্ঞান হয়ে থাকি। স্বাতী খুশি হয়েছে, সেই জন্য আমিও খুশী, সে খুশীতে ভেজাল নেই, কিন্তু অস্বস্তিটাও সত্যি, ছটফটানিটাও সত্যি, দেখা যাক। তোর গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছে। ঐ গল্পটা আমি আগেও তোর মুখে শুনেছিলুম; কিংবা আমেরিকায় থাকার সময়ে আমায় সংক্ষেপে লিখেছিলি --- ব্যাপারটা সত্যি ভালো। যাই হোক, কিন্তু ও-গল্প এখন কৃত্তিবাসে ছাপা যাবে না  -- কেন না, কৃত্তিবাস বহুদিন বেরোয়নি --- জানুয়ারি মাস নাগাদ একটা বার করা যায় কিনা দেখিস, সেটা হবে ২৫ নং সংকলন --- সুতরাং সেটাতে শুধু কবিতাই থাকবে --- সম্ভবত কৃত্তিবাসের ঐটাই শেষ সংখ্যা। গল্পটা এখন থাক, তুই কয়েকটা কবিতা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দে।
                                                                                সুনীল

( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা ও গল্পের বহু সংকলন সম্পাদনা করেছেন কিন্তু সমীর রায়চৌধুরীর লেখা সেগুলোয় অন্তর্ভুক্ত করেননি। সমীর বোধ হয় সুনীলের চরিত্রে পরিবর্তনের আঁচ পেয়ে চিঠির বদলে তাঁকে টেলিগ্রাম পাঠানো আরম্ভ করেছিলেন। পরবর্তীকালে সুনীল সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করেছেন সমীরকে। তার কারণ হয়তো সমীর হাংরি আন্দোলনের একজন স্রষ্টাদের অন্যতম ছিলেন বলে )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন